ফ্রী গেস্ট পোস্টিং অথবা ফ্রী ব্যাকলিংক পেতে পোস্ট করুন আমাদের সাইটে বিস্তারিত জানুন পোস্ট করুন !

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প - পর্ব ০১

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প


🏵️মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প 🏵️

🏵️লেখক - আমিনুর রহমান 🏵️

🏵️ফেছবুক থেকে সংগ্রহীত 🏵️

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প - পর্ব ০১ 


আমার স্ত্রী অনিমা যখন ডিভোর্স পেপারে সাইন করে তখন আমার কোলে আমাদের এক বছরের বাচ্চাটা অনবরত কাঁদছে। কিন্তু অনিমার সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই। কারণ সে তাঁর সংসার জীবন থেকে নিজের ফিউচারটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমি অনেকবার অনিমাকে অনুরোধ করেছিলাম, আমার জন্য না হোক,আমাদের সন্তানের কথা চিন্তা করে থেকেও যাও প্লিজ। এতো ছোট একটা বাচ্চা,মা ছাড়া কিভাবে থাকবে? কিন্তু সে আমার অনুরোধ রাখেনি। অনিমা যখন ডিভোর্স পেপারে সাইন করলো তখন তাঁর চোখে আমি আমার জন্য কোনো ভালোবাসা দেখিনি,আমার সন্তানের জন্যও মায়ের ভালোবাসাটা আমি অনিমার চোখে দেখতে পাইনি।

বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান হয়ে অনিমাকে বিয়ে করেছিলাম। ভেবেছিলাম অনিমার সঙ্গ পেলে আমার জীবনে আর কাউকে দরকার হবে না। অনিমার ভালোবাসাটা নিয়েই আমি বেঁচে থাকতে পারবো। যেদিন বাবা জানতে পারলেন আমি তাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি। সেদিনই বাবা আমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আমাকে চিরদিনের জন্য বাসা থেকে বের করে দেন। অনিমার আদর ভালোবাসা পেয়ে আমি আমার কাছের মানুষদের ভুলে গিয়েছিলাম। সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। অনিমা অনার্স শেষ করলো,আমাদের ঘর আলো ঘরে ফুটফুটে একটা সন্তান আসলো। তখন আমি পঁচিশ হাজার টাকা বেতনে একটা চাকরি করতাম। এটা দিয়েই আমাদের চলে যেতো। হঠাৎ করেই একদিন অনিমা আমাকে জড়িয়ে ধরলো বলল,

"আমার চাকরি হয়েছে,এখন থেকে আর আমাদের এতো কষ্ট করত হবে না। কোনো অভাব থাকবে না আমাদের। থাকার জন্য ফ্ল্যাট পাবো,চলার জন্য গাড়ি পাবো। দুঃখ কষ্ট আমাদেরকে কখনো স্পর্শ করতে পারবে না।"

অনিমা যখন কথাগুলো বলল তখন অনিমাকে অনেক খুশি মনে হলো। এতোটা খুৃশি এর আগে কখনো তাকে দেখিনি আমি। তবে তাঁর এই চাকরি পাওয়াটাতে কেনো জানি আমি খুৃশি হতে পারলাম না। তাহলে কি এতোটা দিন আমি তাকে একটুও সুখ দিতে পারিনি? সবসময় অভাবের মধ্যে রেখেছি? অথচ আমি ভাবতাম এই পঁচিশ হাজার টাকা বেতনে জব করেই আমি আমার স্ত্রীন সন্তানকে খুশি রাখতে পেরেছি। কিন্তু আমার ধারণাটা ভুল। কারণ অনিমা আমার এই অল্প টাকার চাকরিতে কখনোই খুশি ছিলো না। অনিমার কথা শুনে নিজেকে বাস্তবে প্রতিস্থাপন করলাম।

"তুমি খুশি হওনি আমার চাকরি হওয়াতে?"

"চাকরিটা না করলে হয় না?"

"কি বলছো তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? এতো সুন্দর একটা চাকরি পেয়ে কেউ ছেড়ে দিবে নাকি। নিজে তো প্রতিষ্ঠিত হতে পারোনি, আর এখন আমি হয়েছি এটাও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তোমার।"

অনিমার এই একটা কথা শুনে মনে হলো কেউ যেনো তাঁর বিষাক্ত ধনুক আমার বুকে ঢুকিয়ে দিয়ে ভিতরটা ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। তবুও আমার ছিন্নভিন্ন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে অনিমাকে বললাম।

"ঠিকই বলেছো আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। কারণ আমি কখনো নিজের ফিউচার নিয়ে ভাবিইনি। যদি ভাবতাম তাহলে বাবা মার অবাধ্য হয়ে তোমাকে বিয়ে করতাম না। আমার অবস্থান থাকতো অনেক উপরে। কিন্তু আমি আমার বিলাসবহুল পরিবার ছেড়ে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছি এটাই আমার ভুল ছিলো।"

"তুমি কখনো অভাব কি জিনিস বুঝতে পারোনি। কিন্তু আমি ছোট থেকেই অভাবের মাঝে বড় হয়েছি। বুঝতে শিখেছি টাকা ছাড়া এই দুনিয়ায় কেউ আপন হয় না। আমার অতীত জীবনটা অনেক অভাব অনটনে কাটিয়েছি কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ জীবনটা আমি আরাম আয়েশে কাটাতে চাই।"

"নিজের কাছের মানুষ গুলোর থেকে টাকা কখনো সুখ দিতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি চাকরি করলে আমাদের আলাদা থাকতে হবে। তুমি যদি ঢাকাতেই চাকরি করতে আমার কোনো আপত্তি থাকতো না কিন্তু তুমি রাজশাহী একা একা চাকরি করবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।"

"একা থাকবো কেনো? আমি তুমি আর আমাদের সন্তানকে নিয়ে থাকবো। তোমাকে কিছুই করতে হবে না। শুধু বাচ্চাটাকে সামলামে। তুমি হয়তো জানো না কয়েক বছর পর আমি কোথায় পৌছে যাবো।"

"তাঁর মানে তুমি বলতে চাইছো যে আমি আমার চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে তোমার সাথে থাকবো? তুমি চাকরি করবে আর আমি বাচ্চা সামলামো? তোমার টাকায় আমাকে থাকতে হবে,খেতে হবে?"

"আমার টাকা বলছো কেনো? আমার সবকিছুই তো তোমার। তোমার পঁচিশ হাজার টাকা বেতনে চাকরির থেকে আমার চাকরিটা আমাদের সুখে রাখবে। সেজন্যই আমি এমন বলেছি। তুমি যদি আমার থেকে ভালো চাকরি করতে, প্রতিষ্ঠিত হতে তাহলে কখনোই আমি এই চাকরি টা করতাম না। তুমি একটাবার ভেবে দেখো প্লিজ!"

"আমি এমন পুরুষ নই যে নিজের বউকে দিয়ে চাকরি করাবো এবং তাঁর টাকায় বসে বসে খাবো। তুমি আমাকে সময় দাও আস্তে আস্তে তোমার সব চাহিদাই আমি পূরণ করবো। যতো কষ্টই হোক আমি তোমাকে কখনো কোনো অভাবের মধ্যে রাখবো না। তবুও তোমার চাকরি করতে হবে না।"

"তুমি বুঝতেছো না এই চাকরিটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু। স্বামী হিসেবে,ভালোবাসার মানুষ হিসেবে তুমি এইটুকু করতে পারবে না?"

"তুমি কি তোমার সংসার,স্বামী সন্তানের জন্য নিজের ফিউচারটাকে ত্যাগ করতে পারো না?"

"আমি তো তোমাদেরকে ছেড়ে যাচ্ছি না। শুধু তোমাদের সঙ্গ চাইছি। তোমার যদি খুব বেশি সমস্যা হয় তুমিও না হয় ছোটখাটো একটা চাকরি করবে।"

"আমাদের বাচ্চার কি হবে? আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাবো না। তোমাকে আমাদের সাথেই থাকতে হবে।"

"আমি এমন একটা সুযোগ হাত ছাড়া করবো না। ভবিষ্যতে আমাকে যে তুমি ছেড়ে যাবে না এর কোনো নিশ্চয়তা আছে? যেখানে তুমি তোমার বাবা মাকে ছেড়ে এসেছো। যারা তোমাকে জন্ম দিয়েছেন,পঁচিশটা বছর লালন পালন করেছে সেই বাবা মায়ের সাথেই কোনো সম্পর্ক রাখোনি তুমি। আর আমি তো তোমার কয়েকদিনের ভালোবাসা। কথাগুলো হয়তো শুনতে তোমার খারাপ লাগবে। কিন্তু এগুলো সত্য। যে মানুষটা পঁচিশ বছরের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারেনি সে মানুষটা তিন বছরের সম্পর্ক মুহূর্তের মধ্যেই ছিন্ন করবে না এমনটা ভাবা বোকামি।"

"আমি কোনোদিন ভাবিনি এমন কথাও আমাকে শুনতে হবে তাও আবার নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুৃষটার কাছ থেকে। আমি তোমার জন্যই আমার বাবা মাকে ছেড়ে আসলাম। আর আজকে তুমি এটা দিয়েই আমার ভিতরটাকে ক্ষতবিক্ষত করলে। তুমি যদি যেতে চাও তাহলে তোমাকে একাই যেতে হবে। আমি তোমার সাথে যাবো না। আমার স্ত্রী থাকা অবস্থায় তুমি কখনো চাকরি করতে পারবে না। তোমাকে এই চাকরিটা করতে হলে ডিভোর্স নিতে হবে।"

"যদি এটাই তোমার শেষ কথা হয় তাহলে আমি তাই করবো। ভাগ্যিস ডিভোর্সের কথাটা আমার চাকরি হওয়ার আগে বলোনি। তাহলে হয়তো না খেয়ে মরতে হতো আমাকে।"

"আমার অয়নকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে।"

"কষ্ট হবে কেনো? অয়ন তো তোমার কাছেই থাকবে। আমি অয়নকে নিচ্ছি না।"

"কি বলছো তুমি? এক বছরের একটা বাচ্চা মা ছাড়া কিভাবে থাকবে? এতোটা স্বার্থপর হইও না।"

"আমি তোমাকে কতবোবার বলেছি আমি এখন বাচ্চা নিতে চাই না। কিন্তু তুমি আমার কথা শোনোনি। না,তোমার বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বাচ্চা লাগবে। বাচ্চা ছাড়া তোমার চলবে না। বাচ্চাটা নিয়েছিলে তুমি তাই ও তোমার কাছেই থাকবে। তবে চিন্তা করো না ভরণপোষণের দায়িত্ব আমিও নিবো। যখন যা লাগবে আমি দিবো।"

"তুমি নিজের ক্যারিয়ারের জন্য এতোটা নিচে নামবে কখনো ভাবিনি।"

"যে মানুষটা সব ক্ষেত্রেই নিজের পুরুষত্ব দেখায় তাঁর মুখে এমন কথা মানায় না। বিয়ের পর তুমি আমার পেছনে যতো টাকা খরঁচ করেছো আমি সব পরিশোধ করে দিবো। যেহেতু সম্পর্কটাই থাকছে না,সেখানে তোমার কাছে ঋণী থাকতে চাই না।"

সেদিনের পর থেকে অনিমার সাথে আমার আর কথা হয়নি। আজ যখন সে ডিভোর্স পেপারে সাইন করলো তখনও কেনো জানি নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না,এই মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাঁর চোখে মুখে কষ্টের কোনো চিহ্ন আমি দেখতে পাইনি। অয়নকে নিয়ে যখন আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করলাম তখনও অয়ন কান্না করছে। তাঁর চোখের জলে আমাদের ডিভোর্স পেপারটা ভিজে গেলো। এটাই বোধয় প্রথম কোনো ডিভোর্স পেপার যেটা সন্তানের চোখের পানিতে ভিজল। অথচ আমি কিংবা অনিমা কেউ চোখের পানি ফেলিনি। আমাদের বাচ্চার বুক ফাটা কান্নাটাও অনিমাকে আটকাতে পারেনি সেদিন।"


চলবে........


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বাগতম !!! আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য, নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের সাইটের সাথেই থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Amarbangla.top Discuss about web designing Tech
Hello, How can we help you?
Start chat...