ফ্রী গেস্ট পোস্টিং অথবা ফ্রী ব্যাকলিংক পেতে পোস্ট করুন আমাদের সাইটে বিস্তারিত জানুন পোস্ট করুন !

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প - পর্ব ০২

 

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প

🏵️মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প 🏵️

🏵️লেখক - আমিনুর রহমান 🏵️

🏵️ফেছবুক থেকে সংগ্রহীত 🏵️

মায়ার বাধঁন - বাংলা ভালোবাসার গল্প - পর্ব ০২  

অনিমা চলে যাওয়ার পরে আমি অনেক একা হয়ে যাই। আমার এই একাকিত্বের সঙ্গ দেয় আমার ছেলে অয়ন। আমি তাকে নিয়েই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখি। আমি ভেবেছিলাম অনিমা হয়তো আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করবে না। তবে এমনটা হয়নি। সে মাঝে মাঝেই ফোন দিতো,অয়ন কেমন আছে জানতে চাইতো। তবে কখনো একটি বারের জন্যও জিগ্যেস করতো না আমি কেমন আছি। তখন মনে হতো ডিভোর্সটা অনিমা মন থেকেই চেয়েছিলো,ক্যারিয়ার ছিলো শুধুমাত্র বাহানা। আস্তে আস্তে অয়ন বড় হতে লাগলো আমার দায়িত্বটাও বাড়তে লাগলো। পৃথিবীর সবথেকে দামি ভালোবাসাটা হলো মায়ের ভালোবাসা কিন্তু আমার সন্তান সেটা পায়নি। এর জন্য আমি নিজেকেও দায়ি করি। আমাদের দুজনের ইগোর কারণেই আমাদের সন্তানটা তাঁর মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে সময়ের ব্যবধানে সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়,যেমনটা প্রকৃতি নেয়। অয়নও মানিয়ে নিয়েছে। 
একসময় বাবা মা আমাদের ডিভোর্সের ব্যাপারে জেনে যায়। আমি ভেবেছিলাম বাবা হয়তো আর কোনোদিন আমাকে তাঁর ছেলে হিসেবে মেনে নিবে না,কারণ মানুষটা অন্যরকম। কিন্তু সব জেদ ভুলে যেদিন আমার কাছে আসলেন সেদিন বুঝতে পারলাম বাবা মা কখনো সন্তানের ওপর রাগ করে থাকতে পারে না। থাকলেও সেটা খুব কম সময়ের জন্য। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নিজেদের বিলাসবহুল বাসায় চলে গেলাম। আমার থেকে অয়ন অনেক বেশি খুশি হয়েছে। কারণ সে সবসময় একা একা থাকতো। আমিও সারাদিন অফিসে থাকতাম তাই চাইলেও অয়নের সাথে সময় কাটাতে পারতাম না। তবে রাতে আমি একজন আদর্শ বাবার মতোই আমার ছেলেকে সঙ্গ দিয়েছি। কিন্তু এখানে এসে অয়ন দিনেও অনেক খেলার সাথী পেয়েছে। এটার কারণেই হয়তো সে এখন সবসময় হাসি খুশি থাকে। তবুও কোথায় যেনো কমতি থেকেই যায়। মায়ের মায়া মমতার কাছে পৃথিবীর সবকিছুই কি তুচ্ছ না? কিন্তু কিই বা করার আছে? পৃথিবীতে সব মা তো আর এক হয় না। দিন দিন মেয়েরা যতো বেশি মডার্ন হচ্ছে তাদের মা হিসেবে ভালোবাসাটাও ততো কমতে থাকছে। এখন তো অনেক মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর বুকের দুধই খাওয়াতে চায় না,যদি ফিগার নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়ে।
কাজেই পৃথিবীতে সব মায়ের ভালোবাসায় এক এটা মনে করে বোকামি। পৃথিবীতে এমন মাও তো আছে যারা নিজের ছেলে সন্তানকে ছেড়ে শুধুমাত্র সেক্সুয়াল সুখের জন্য নিজের সংসার ত্যাগ করতেও ভাবেনি। স্মার্টনেসের সাথে সাথে কেনো জানি মনে হয় মায়ের ভালোবাসাটাও কমে যাচ্ছে। অনিমা যদি শিক্ষিত না হয়ে সাধারণ একজন মা হতো তাহলে সে কি এমন করে এক বছরের বাচ্চাটাকে রেখে চলে যেতে পারতো? শুধুমাত্র নিজের ক্যারিয়ার জন্য নিজের বাচ্চাটাকে ছেড়ে যাওয়া কোনো সাধারণ মায়ের পক্ষে সম্ভব না। কারণ সাধারণ মায়ের ভালোবাসা গুলো অনিমাদের মতো শিক্ষিত মায়ের ভালোবাসার থেকে অনেক বেশি দামি। তারা সন্তানের খারাপ হবে এমন কিছু কখনো চাইতে পারে না। তারা কখনো নিজেদের স্বার্থ বোঝে না,বুঝে শুধু সন্তানের ভালো থাকা।
মাঝে মাঝে যখন ফেসবুকে যেতাম তখন অনিমাকে দেখতে পেতাম। সময়ের ব্যবধানে সে অনেকটা উপরে পৌছে গিয়েছে। সুন্দর সুন্দর ছেলেদের সাথে তাঁর প্যান্ট শার্ট পড়া ছবি গুলো যখন দেখতাম তখন নিজের অজান্তেই ভিতরটাতে খারাপ লাগা কাজ করতো। কখনো বা নিজেকে প্রশ্ন করতাম,অনিমা কি আমাকে ভুলে গিয়েছে? সে কি বিয়ে করেছে আমার অজান্তেই? অনেক দিন পরপর ফোন তো সে আমার জন্য দেয় না। অয়নের কথা জানা শেষ হলেই ফোনটা রেখে দেয়। দীর্ঘ একটা বছর পাড় হয়ে গেছে আমাদের ডিভোর্সের। এই এক বছরে অনিমা কতোবার ফোন দিয়েছে আমার জানা নেই। তবে কখনো ভুলেও কোনোদিন আমি কেমন আছি জানতে চায়নি। আমার খারাপ থাকার কারণ জানতে চায়নি। এগুলো কি প্রমাণ করে না,সে আমাকে ছেড়ে অনেক ভালো আছে?
হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম অনিমা ফোন দিয়েছে। আমি ফোন রিসিভ করলাম কিন্তু কোনো কথা বললাম না,অনিমায় প্রথম কথা বলল।
"অয়ন কি তোমার কাছে আছে?"
"না,আমি অফিসে।"
"তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো। সময় হবে?"
"অবশ্যই, কেনো নয়? আমি তোমার মতো এতো ব্যস্ত মানুষ না। বলো কি বলবে,আমি ফ্রী আছি।"
"আমি তোমাকে কি বলেছিলাম মনে আছে? যা বলেছিলাম সেটা করে দেখিয়েছি। নিজেকে এমন অবস্থানে নিয়ে গিয়েছি,নিজেকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি যে বাকিটা জীবন খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে দিতে পারবো। জীবনে সবসময় ইগো দেখাতে হয় না। স্ত্রীর টাকায় খাওয়া যাবে না,থাকা যাবে না এমনটা ভাবা হচ্ছে নিচু মনমানসিকতার লক্ষণ। তুমি কি চাইলে সব ভুলে আমার কাছে চলে আসতে পারো না? আমাকে না ভালোবাসতে তুমি? ভালোবাসার জন্য নিজের ইগোটাকে ত্যাগ করতে পারবে না? আমার এমন সুখের দিনে আমার কাছের মানুষ গুলো আমার পাশে থাকলে আমার চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে কেউ হবে না।"
"না পারি না। তুমি কি জানো? মানুষ হিসেবে তুমি অনেক উঁচুতে পৌছে গিয়েছো। অনেকেই তোমাকে চিনে,জানে। আজ তোমার কোনো কিছুর অভাব নেই। একটা মেয়ে হয়েও এমন কিছু করে দেখিয়েছো যেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। হয়তো সফল নারীদের মধ্যে তোমার নামটাও যত্ন করে লেখা থাকবে। কিন্তু একজন মা হিসেবে তুমি কতোটা সফল হয়েছো সেটা হয়তো তুমি জানো না। একজন স্ত্রী হিসেবে তুমি কতোটা সফল হতে পেরেছো তুমি জানো না।"
"তুমি শুধু তোমার কথাটা বললে? আমি চাইলে আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে আসতে পারতাম কিন্তু সবাই যখন আমার দিকে চেয়ে জিগ্যেস করবে, জানতে চাইবে এই ছেলেটার বাবা কে? তখন আমি কি জবাব দিতাম? আমি কখনো চাইনি সবাই জানুক আমার বিয়ে হয়েছিলো,একটা বাচ্চা আছে। আমি কখনো একজন ডিভোর্সি মেয়ে হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করতে চাইনি।"
"নিজের সন্তানের জন্য মায়েরা কতো ত্যাগ স্বীকার করে আর তুমি কিনা শুধুমাত্র সবাই জানবে তুমি ডিভোর্সি মেয়ে এটার কারণেই নিজের সন্তানকে নিজের কাছে নিয়ে যাওনি এটা ভাবতেই পারছি না। সবাই না,বলো তোমার চাকরির জন্য তুমি তোমার সন্তানকে সাথে নিতে পারোনি। তোমার কাছে তোমার ফিউচারটাই বড় ছিলো। তুমি চেয়েছিলো তোমার আশেপাশের মানুষ সবাই যেনো জানে তুমি অবিবাহিত। তাই তুমি এমনটা করেছো। আর সত্যি বলতে অবিবাহিত মেয়েদের অফিসের বসরা অনেক দ্রুত প্রমোশন করিয়ে দেয়। তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এজন্যই এতো অল্প সময়ে তুমি এতোটা উপরে পৌছে গিয়েছো।"
"আমি জানতামই না আমি মানুষ হিসেবে এতোটা খারাপ। তোমার কথাতেই জানতে পারলাম,সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তবে কি জানো সবসময় অন্যের দোষটা না খুঁজে নিজের দোষটাও খোঁজা উচিত। ভুল দুজনেরই থাকে কেউ স্বীকার করে কেউ করে না। আমি তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম কিছু ভালো লাগার মতো কথা বলতে কিন্তু তুমি আমাকে যা খুশি তাই বললে। এমনটাই ভাবো বুঝি আমাকে?"
"তুমি জানো যেটা কখনো হওয়ার নয় তবুও কেনো সেটা আমার কাছে চাও। শুধু ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিলেই মায়ের দায়িত্বটা শেষ হয়ে যায় না এই কথাটা মনে রাখবে। তোমার যদি ইচ্ছে হয় আমাদের কাছে চলে আসতে পারো। বাট আমি তোমার কাছে যাবো এটা কখনো কল্পনাও করবে না।"
"আমি ঢাকাতে ট্রান্সফার হচ্ছি। তোমাকে এটা জানানোর জন্যই ফোন করেছিলাম। শুধু দেখলাম আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাটা আগের মতোই আছে নাকি বদলে গিয়েছে।"
"ভালোবাসা জিনিসটা সবসময় একজন মানুষের জন্য একই রকম থাকবে এটা ভাবা বোকামি। সময়ের ব্যবধানে ভালোবাসাটাও পরিবর্তন হয়। আর এর জন্য আমরা মানুষরাই দায়ি।"
"অনেক ভালো বলছে। বিয়ে করবে না?"
"যার একটা ছেলে আছে,যাকে ছেড়ে তাঁর বউ চলে গিয়েছে তাকে বিয়ে করবে এমন মেয়ে বোধয় নাই।"
"বাসায় গিয়ে একটু ফোন দিতে পারবে?"
"কেনো?"
"অয়নের সাথে কথা বলতাম।"
"অয়ন এখনো কথা বলা শিখেনি। আর বলতে পারলেও আমি কথা বলতে দিতাম না।"
"শুধু ওর আওয়াজটা শুনবো।"
"এতোই যদি ভালোবাসো তাহলে এই এক বছরে একটা দিনও কি সময় হয়নি নিজের ছেলেকে দেখতে আসার? আসলে তো আর না করতাম না। বরং খুশিই হতাম। কিন্তু তুমি আসোনি। এখন মায়া কান্না না কাঁদলেও চলবে। ভালো থাকো।"
কথাগুলো বলে ফোন রেখে দেই। কারণ অনিমার ইমোশনটা আমার সহ্য হচ্ছিলো না।
বাসায় যাওয়ার পর বাবা রাতে রুমে ডেকে নিয়ে বললেন,"তোর কাছে কিছু চাইবো,না করিস না।"
আমার মনে হলো এই মুহূর্তে যদি আমার জানটাও চাইতো তবুও আমি না করতে পারতাম না। কারণ আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে আমার বাবা আমার কাছে কখনো কিছু চায়নি,আমিও দেইনি। সবসময় শুধু নিয়েই গেছি। কিন্তু আজ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি,কিছু হলেও দিতে চাই, তাই খুব খুশি মনেই বললাম।
"বলো কি চাও? ছেলে হিসেবে কখনোই আমি কিছু করতে পারিনি। আজ কিছু করতে চাই।"
"তুই বিয়ে কর। এভাবে আর কতোদিন একা থাকবি? জীবনে বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষ দরকার, যে মানুষটা সবসময় তোর পাশে থাকবে,তোর খেয়াল রাখবে। অতীতের সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর। আমি বাবা হয়ে তোর এই একাকিত্বের কষ্টটা সহ্য করতে পারি না। তোর জন্য না হলেও অয়নের জন্য একটা বিয়ে কর। ছেলেটাও মায়ের আদর পেলো,তুইও তোর একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেলি।"
আমি ভেবেছিলাম বাবা আমার কাছে কিছু চাইবে কিন্তু ভাবিনি আমার জন্যই চাইবে। তারা এতোটা চিন্তা করে আমাকে নিয়ে এটা মনে হতেই তাদের প্রতি শ্রদ্ধাটা অনেক গুণ বেড়ে গেলো। বাবা মায়েরা বোধয় এমনই হয়,সন্তানদেরকে সবসময় দিয়েই যায়। কখনো নিতে চায় না। আমার বলতে ইচ্ছে হলো,
"আমি এভাবেই ভালো আছি। বিয়ে টিয়ে করবো না"
কিন্তু শুধুমাত্র বাবার হাসিমুখটা দেখার লোভ সামলাতে না পেরে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলাম। বাবা মাও অনেক খুশি হলো। কাল থেকে যে তারা আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করবে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। কিংবা কে জানে হয়তো মেয়ে আগে থেকেই দেখে রেখেছে।
চলবে..........

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বাগতম !!! আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য, নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের সাইটের সাথেই থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Amarbangla.top Discuss about web designing Tech
Hello, How can we help you?
Start chat...