খানজাহান আলী সেতু: রূপসা নদীর উপর এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য 🌉
সাজানো গোছানো খুলনা শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া রূপসা নদী। এই নদীর বুকে এক বিশাল স্থাপত্যকীর্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যা দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি সেই বিখ্যাত খানজাহান আলী সেতু নিয়ে। যদিও স্থানীয়ভাবে এবং বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটি 'রূপসা সেতু' নামেই পরিচিত, তবে এর আনুষ্ঠানিক নাম কিন্তু মধ্যযুগীয় বিখ্যাত সাধক ও শাসক খান জাহান আলীর নাম অনুসারে রাখা হয়েছে। এই সেতুর নির্মাণ শুধু একটি প্রকৌশলগত সাফল্য নয়, এটি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে এনেছে এক আমূল পরিবর্তন। 🚀
আপনি যদি কখনও খুলনা, বাগেরহাট বা মংলা বন্দরের দিকে যাত্রা করেন, তবে এই সেতুটি আপনার চোখে পড়তেই হবে। এর বিশালতা এবং রাতের আলোকসজ্জা মুগ্ধ করার মতো। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই সেতুটি ঠিক কবে এবং কীভাবে তৈরি হলো? অথবা কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? এই ব্লগ পোস্টে আমরা সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করব। আমরা এমনভাবে তথ্যগুলো সাজিয়েছি যেন এটি গুগলের ২০২৫ সালের কনটেন্ট আপডেটের জন্য পুরোপুরি উপযোগী হয়—সহজ, তথ্যবহুল এবং পাঠকের জন্য শতভাগ উপকারী। আমাদের লক্ষ্য হলো, আপনি কেবল সেতুটি সম্পর্কে জানবেন না, বরং এর ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বও বুঝতে পারবেন।
খানজাহান আলী সেতু নির্মাণের আগে খুলনা থেকে বাগেরহাট বা মংলা বন্দরে পৌঁছানো ছিল এক দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মানুষকে ফেরির জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হতো, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করত। সেতুটি চালু হওয়ার পর সেই দুর্ভোগ পুরোপুরি দূর হয়ে গেছে। এটি কেবল সময় বাঁচায়নি, বরং গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করেছে। এই সেতুটি যেন খুলনা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের স্বপ্ন আর প্রগতির প্রতীক। 💡
আমরা এই গাইডটিকে এমনভাবে ডিজাইন করেছি, যেন এটি দেখতে একটি রঙিন ইনফোগ্রাফিকের মতো লাগে—প্রতিটি অংশ আলাদাভাবে হাইলাইট করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় জায়গায় উপযুক্ত ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে আপনার ওয়েবসাইট amarbangla.top এর থিমের সাথে এটি পুরোপুরি মানানসই হয়। আমরা এখানে সেতুর প্রযুক্তিগত দিক, এর অর্থনৈতিক প্রভাব এবং আশেপাশে ঘোরার মতো দারুণ কিছু জায়গার খোঁজও দেব। তাই, আর দেরি না করে চলুন, রূপসার জলের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই বিস্ময়কর স্থাপত্যের গভীরে প্রবেশ করা যাক। 🏞️
খানজাহান আলী সেতু, যা রূপসা সেতু নামে অধিক পরিচিত, এটি খুলনা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে রূপসা নদীর উপর নির্মিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘ কেবল-স্টেড সেতুগুলোর মধ্যে একটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬৫০ কিলোমিটার বা ১,৬৫০ মিটার। এটি ২০০৫ সালে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং তখন থেকেই এটি খুলনা বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। 🗓️
নামকরণের ইতিহাস: সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে মধ্যযুগের বিশিষ্ট মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও বাগেরহাটের শাসক খান জাহান আলীর (১৪০০-১৪৫৯) নামে। তিনি এই অঞ্চলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন, যেমন বিশ্বখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ। তার প্রতি সম্মান জানাতেই এই আধুনিক স্থাপত্যের নাম তার নামে রাখা হয়েছে। এটি আমাদের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি সুন্দর উদাহরণ।
নির্মাণের পটভূমি: এই সেতু নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল খুলনা শহরের সঙ্গে মংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগকে সরাসরি যুক্ত করা। আগে এই রুটে যাতায়াতের জন্য ফেরিই ছিল একমাত্র ভরসা, যা বাণিজ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনের জন্য বিশাল এক **বাধা** তৈরি করত। জাপান সরকারের সহযোগিতায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল এবং এটি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। আপনি যদি এই অঞ্চলের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চান, তবে এই লিংকটি দেখতে পারেন।
ছবি: রূপসা নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা খানজাহান আলী সেতু
সেতুটি উদ্বোধনের পর মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির গতি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন এবং বাগেরহাটের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে যাওয়াও অনেক সহজ হয়ে যায়। এক কথায়, এই সেতু এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
খানজাহান আলী সেতু কেবল একটি কংক্রিটের কাঠামো নয়, এটি আধুনিক প্রকৌশল ও স্থাপত্যের এক চমৎকার সমন্বয়। এটি নির্মাণে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাকে কেবল-স্টেড (Cable-stayed) বলা হয়। এই ধরনের সেতুতে, ডেক বা সড়কপথকে সরাসরি স্তম্ভের সাথে সংযুক্ত ইস্পাতের মোটা তার বা কেবল দিয়ে টেনে রাখা হয়। এর ফলে সেতুর কাঠামোর ভারবহন ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় এবং মাঝখানে কোনও সাপোর্ট ছাড়াই দীর্ঘ স্প্যান তৈরি করা যায়। 🌉
কেন কেবল-স্টেড? রূপসা একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। তাই নদীর মাঝখানে কম সংখ্যক পিলার ব্যবহার করার প্রয়োজন ছিল, যাতে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়। কেবল-স্টেড নকশা এই সমস্যার সমাধান দিয়েছে। সেতুটির প্রধান স্প্যানগুলি বিশাল এবং এর দুটি উঁচু টাওয়ার দূর থেকে দৃশ্যমান। এই টাওয়ারগুলো কেবলগুলিকে ধরে রাখে। নির্মাণকাজ চলাকালীন আন্তর্জাতিক মানের ভূমিকম্প সহনশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
সেতুটির মোট প্রস্থ প্রায় ১৬.৪৮ মিটার, যেখানে চার লেনের যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, পথচারীদের জন্য দুই পাশে ফুটপাথ রাখা হয়েছে। রাতের বেলা যখন পুরো সেতুতে আলো জ্বলে ওঠে, তখন এটি এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। সেতুর শক্তিশালী ভিত্তি ও কাঠামো এটিকে দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয়। নদীর স্রোত, লবণাক্ততা এবং আর্দ্রতা মোকাবিলার জন্য এতে বিশেষ ধরনের **ক্ষয়রোধী উপাদান** ব্যবহার করা হয়েছে, যা এর স্থায়িত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আপনি যদি সেতুর স্থাপত্য নিয়ে আরও পড়তে চান, তবে এই গাইডটি সহায়ক হবে।
কেবল-স্টেড প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের দেশে খুব কম, তাই খানজাহান আলী সেতু এই দিক থেকেও একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরাও আন্তর্জাতিক মানের বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারি। এই সেতুর নির্মাণ কৌশল অনেক নতুন প্রকৌশলীকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর হলো মংলা। আর এই বন্দরের সাথে দেশের মূল সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে খানজাহান আলী সেতুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেতুটি চালু হওয়ার আগে, পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ফেরি পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এর ফলে পণ্যের পরিবহন খরচ যেমন বাড়তো, তেমনি সময়ও নষ্ট হতো। কিন্তু এখন মংলা বন্দর থেকে পণ্য খুব দ্রুত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। 📈
অর্থনৈতিক প্রভাব:
- সময় ও খরচ সাশ্রয়: ফেরির ঝামেলা দূর হওয়ায় পরিবহন সময় প্রায় ৮০% কমে এসেছে, যা সরাসরি ব্যবসার খরচ কমিয়েছে।
- বাণিজ্যের প্রসার: দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা মংলা বন্দর ব্যবহারে আরও বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
- পর্যটন উন্নয়ন: বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত অনেক সহজ হওয়ায় এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে।
এই সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মানুষের জন্য এক **আশীর্বাদ** স্বরূপ। চিকিৎসার জন্য বা উচ্চশিক্ষার জন্য যারা খুলনা শহরে আসতে চাইতেন, তাদের জন্য নদী পারাপার ছিল একটি বড় বাধা। এখন তারা খুব সহজে এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। খানজাহান আলী সেতু শুধুমাত্র একটি সড়কপথ নয়, এটি এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চাবিকাঠি। 🔑
সেতুটি বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্কের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেশের অন্যান্য প্রধান শহরের সাথে খুলনার সংযোগকে আরও দৃঢ় করেছে। এই ধরণের অবকাঠামো উন্নয়ন যে কোনো দেশের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
শুধু যোগাযোগ স্থাপন করাই নয়, খানজাহান আলী সেতু এখন নিজেই একটি দর্শনীয় স্থান। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যখন পুরো সেতু ঝলমলে আলোয় সেজে ওঠে, তখন রূপসা নদীর উপর এর প্রতিচ্ছবি এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। অনেক পর্যটক শুধুমাত্র এই দৃশ্য উপভোগ করার জন্যই এখানে ভিড় করেন। 🌃
সেতু সংলগ্ন আকর্ষণ:
- সেতু সংলগ্ন পার্ক: সেতুর পাশে বেশ কিছু অস্থায়ী এবং স্থায়ী ছোট পার্ক গড়ে উঠেছে, যেখানে সন্ধ্যায় মানুষজন আড্ডা দিতে আসে। এখান থেকে সেতুর সম্পূর্ণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
- রূপসা নদীর সৌন্দর্য: সেতুর নিচ দিয়ে ট্রলার বা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো এক দারুণ অভিজ্ঞতা। আপনি নদী থেকে সেতুর বিশালতা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
- মংলা বন্দর: সেতু পার হলেই মংলা বন্দর। যদি সুযোগ থাকে, তবে বন্দরের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল জাহাজগুলোর আনাগোনা দেখা যেতে পারে।
এই সেতুর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি আপনাকে সরাসরি সুন্দরবন ও বাগেরহাটের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর দিকে নিয়ে যায়। সেতু পার হয়ে আপনি মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদে পৌঁছাতে পারেন। যারা **একদিনেই খুলনা-বাগেরহাটের মূল আকর্ষণগুলো** ঘুরে দেখতে চান, তাদের জন্য এই সেতুটি একটি নিখুঁত রুট তৈরি করে দিয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটরদের লঞ্চগুলোও সাধারণত খুলনার এই দিক থেকেই যাত্রা শুরু করে। 🚤
অতএব, আপনার খুলনা ভ্রমণ তালিকায় খানজাহান আলী সেতু একটি বাধ্যতামূলক বিরতি হওয়া উচিত। এখানকার শীতল বাতাস এবং নদীর মনোরম দৃশ্য আপনার ক্লান্তি দূর করে দেবে। ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি একটি **আইকনিক স্পট**, বিশেষ করে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময়। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে এখানে এসে দারুণ কিছু স্মৃতি তৈরি করতে পারেন।
যেকোনো বিশাল অবকাঠামোকে দীর্ঘকাল সচল রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। খানজাহান আলী সেতুর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। যেহেতু সেতুটি লবণাক্ত জলের উপর অবস্থিত, তাই এর কাঠামোকে মরিচা ধরা এবং ক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়।
টোল আদায়: সেতুটি নির্মাণের খরচ পুনরুদ্ধার এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য এখানে টোল আদায় করা হয়। বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের জন্য টোল এর হার ভিন্ন ভিন্ন হয়। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক—সব ধরনের গাড়ির জন্য নির্ধারিত টোল দিতে হয়। এই টোল ব্যবস্থা সেতুটির আর্থিক সচ্ছলতা বজায় রাখতে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অর্থ যোগাতে সাহায্য করে। 💰
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়নের যে গতি এসেছে, তাতে খানজাহান আলী সেতুর গুরুত্ব ভবিষ্যতেও আরও বাড়বে। বিশেষ করে মংলা বন্দরের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে এই সেতুর উপর যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে দ্বিতীয় আরেকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও আসতে পারে, কিন্তু এই সেতুটি সবসময়ই **ঐতিহাসিক ভিত্তি** হিসেবে তার স্থান ধরে রাখবে। সেতুটি স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এই ধরণের বৃহৎ সেতুগুলো দেশের সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, একটি সুপরিকল্পিত অবকাঠামো কীভাবে একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
উপসংহার: খুলনার প্রগতির প্রতীক
আমরা এই পুরো আলোচনায় দেখলাম যে, খানজাহান আলী সেতু কেবল রূপসা নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি কংক্রিটের কাঠামো নয়, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল প্রতীক। কেবল-স্টেড প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্মিত এই সেতুটি মংলা বন্দরকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে দিয়েছে এক নতুন গতি। ফেরি পারাপারের দীর্ঘ অপেক্ষার দিন শেষ করে এটি যাত্রীদের জন্য নিয়ে এসেছে স্বস্তি ও দ্রুততা। 💨
সেতুর নামকরণ থেকে শুরু করে এর আধুনিক নির্মাণশৈলী—সবকিছুতেই রয়েছে এক বিশেষত্ব। এটি প্রমাণ করে যে, অবকাঠামো উন্নয়নে সঠিক বিনিয়োগ কীভাবে একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দিতে পারে। পাশাপাশি, এর রাতের সৌন্দর্য এবং এর সাথে যুক্ত হওয়া পর্যটন আকর্ষণ এই স্থানটিকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। যারা খুলনা ভ্রমণে আসেন, তাদের কাছে এটি এখন একটি **‘মাস্ট-ভিজিট’** স্পট।
সেতুর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ের প্রক্রিয়া এই বিশাল স্থাপনাটিকে দীর্ঘকাল ধরে সচল রাখার নিশ্চয়তা দেয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যত বাড়বে, মংলা বন্দরের গুরুত্ব যত বাড়বে, ততই এই খানজাহান আলী সেতুর ভূমিকা আরও দৃঢ় হবে। এটি কেবল বর্তমানের সুবিধা দিচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, এই বিস্তারিত গাইডটি আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনায় সহায়তা করবে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে বাড়িয়ে তুলবে।
পাঠকের জন্য পরামর্শ: আপনার প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। 👇
আরো পড়ুন
সাধারণ জিজ্ঞাসা (Q&A) ❓
১. প্রশ্ন: খানজাহান আলী সেতুর অপর নাম কী?উত্তর: যদিও এর আনুষ্ঠানিক নাম খানজাহান আলী সেতু, তবে এটি সাধারণত রূপসা সেতু নামেই বেশি পরিচিত।
২. প্রশ্ন: এই সেতুটি কোন নদীর উপর নির্মিত?
উত্তর: সেতুটি খুলনা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত রূপসা নদীর উপর নির্মিত হয়েছে।
৩. প্রশ্ন: খানজাহান আলী সেতুর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর: সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬৫০ কিলোমিটার বা ১,৬৫০ মিটার।
৪. প্রশ্ন: সেতুটি কত সালে উদ্বোধন করা হয়?
উত্তর: সেতুটি ২০০৫ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
৫. প্রশ্ন: সেতুটির নামকরণের কারণ কী?
উত্তর: সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে মধ্যযুগের বিশিষ্ট শাসক এবং বাগেরহাটের প্রতিষ্ঠাতা খান জাহান আলীর নামানুসারে।
৬. প্রশ্ন: সেতুটি কোন দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে সংযুক্ত করেছে?
উত্তর: এটি খুলনা শহরকে মংলা সমুদ্র বন্দর এবং বাগেরহাট জেলার সাথে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করেছে।
৭. প্রশ্ন: খানজাহান আলী সেতু নির্মাণে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর: এটি কেবল-স্টেড (Cable-stayed) প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত, যা নদীর মাঝখানে কম পিলারের প্রয়োজন নিশ্চিত করে।
৮. প্রশ্ন: সেতু পারাপারে কি টোল দিতে হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের জন্য নির্ধারিত হারে টোল দিতে হয়।
৯. প্রশ্ন: সেতুটি পর্যটকদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এটি কেবল একটি যোগাযোগ মাধ্যম নয়, এর রাতের আলোকসজ্জা একটি দর্শনীয় স্থান এবং এটি সুন্দরবন ও ষাট গম্বুজ মসজিদে যাওয়ার প্রধান প্রবেশদ্বার।
১০. প্রশ্ন: এই সেতুটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর: এটি মংলা বন্দরের পণ্য পরিবহনকে দ্রুত করেছে, যার ফলে আমদানি-রপ্তানির গতি বেড়েছে এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে।
